,

নবীগঞ্জের দিনারপুরে পাহাড় কাটা পরিদর্শনে উপজেলা প্রশাসন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুরে ফের শুরু হয়েছে পাহাড় নিধনের মহোৎসব। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ ঘটনায় পাহাড় কাটা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা ও মামলা দায়ের এর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর সুপারিশ করেছেন স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা। গতকাল বুধবার বিকেলে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে গজনাইপুর ইউনিয়নের লামরোহ, গজনাইপুর, ফুলতলি বাজারসহ কয়েকটি পাহাড় মাটি কাটাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পাহাড় কাটার ঘটনাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি, পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হবে ও পাহাড় কাটায় জড়িত থাকায় স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম মর্তুজা স্বপন ও মহিলা ইউপি সদস্য পারভিন বেগমকে শোকজ করা হবে এবং পরবর্তীতে তাদের ইউপি সদস্য পদ সাসপেন্ড করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ এমপির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দিনারপুর পাহাড়ি দ্বীপ হিসেবে সারাদেশে পরিচিত, পাহাড় আমাদের শত বছরের পুরনো ইতিহাস-ঐতিহ্য। পাহাড় কাটায় যে জড়িত থাকবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশা দেন। উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর পরগনায় প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি না থাকায় সম্প্রতি অবৈধভাবে ফের পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের লামরোহ, সাতাইহাল, গজনাইপুর, মামদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে। ফলে কয়েকশ বছর ধরে গড়ে ওঠা দিনারপুর পরগনার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে যাচ্ছে। পাহাড়ের পরিবেশ, মাটি, পানি ও প্রাণ বৈচিত্র্যের ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে সবুজ বনভুমি। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে পাহাড় কাটতে পারবে না, কাটলে কমপক্ষে ১০ বছরের জেল কিংবা ১০ লক্ষ টাকার জরিমানা প্রদান করতে হবে এমন আইন থাকলেও তার প্রয়োগ না থাকায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, ব্যক্তিগত লাভ, ফলে পরিবেশ সংক্রান্ত আইন প্রয়োগে প্রতিবন্ধকতাসহ নানা কারণে বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা। সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানায়, গজনাইপুর ইউনিয়নের লামরোহ গ্রামের খলিল মিয়ার ছেলে জয়নাল মিয়ার টিলা থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলের নির্দেশে কুতুব মিয়া নামের এক লোক বেশ কিছুদিন ধরে পাহাড় কেটে উজার করছেন। অপর দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই সাতাইহাল গ্রামস্থ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ির প্রবেশ পথেই উচুঁ একটি পাহাড় কেটে সমতল করছেন সাবেক ইউপি সদস্য তোয়াব মিয়া নামের একলোক। পাহাড় কেটে সমতল করে বড় বাড়ি নির্মানের জন্য এমন কর্মকান্ড করছেন বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। এ ছাড়াও গজনাইপুর, মামদপুরসহ আরও কয়েকটি স্থানেই পাহাড়ের মাটি কাটা শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ পরিবেশ বিধ্বংসী এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জোড়ালো কোন ভুমিকা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এসব স্থানে কোন কোন সময় দিন দুপুরে আবার কোন সময় রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে দিনের বেলায় ট্রাকে করে মাটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্যত্র। অনেক জায়গায় এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে পাহাড় কাটা হলেও প্রশাসন যেন নির্বিকার। ক্ষুব্দ এলাকাবাসী বলছেন, প্রভাবশালীদের প্রত্য সহায়তায় বিরামহীনভাবে এই পাহাড় কাটা হচ্ছে প্রশাসনের চোখের সামনেই। ওই অঞ্চলের এলাকাজুড়ে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে অনেক স্থাপনা।


     এই বিভাগের আরো খবর